SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or
Log in with Google Account

অষ্টম শ্রেণি (দাখিল) - কর্ম ও জীবনমুখী শিক্ষা - NCTB BOOK

জীবনধারণের জন্য আমাদের সকলকেই প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করতে হয় । এ কাজগুলোর কিছু কাজ আমরা নিজেরা করি আর কিছু কিছু কাজে অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয় । এই অধ্যায়ে সে ধরনের প্রয়োজনীয়  কাজের ধারণা, গুরুত্ব এবং যারা কাজগুলো করেন তাদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে 

এই অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা :

১. প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত কাজ নিজে করার সুবিধাগুলো বিশ্লেষণ করতে পারব;


২. প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারব;

 ৩. পরিবারের বাইরের ব্যক্তিদের দ্বারা সম্পাদিত প্রাত্যহিক জীবনে সম্পৃক্ত নয় এমন কাজগুলো মূল্যায়ন করতে পারব;

৪. পরিবারের অন্যদের কাজে সহায়তা প্রদান করব;

৫. বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কায়িক কাজসমূহ করব;

৬. বাস্তব পরিস্থিতিতে কায়িক কাজ করব;

৭. কাজের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করব;

৮. বিভিন্ন কাজে ও পেশায় নিয়োজিত ব্যক্তিকে সম্মান প্রদর্শনে আগ্রহী হব;

৯. প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজনীয় কাজসমূহ করতে আগ্রহী হব।

পাঠ : ১, ২,৩ ও ৪

কেন প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করব?

দলগত কাজ
প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজে করো এমন যারা আছ তাদের মধ্য থেকে ২-৩ জন দাঁড়াও । তোমরা কী কী কাজ করো এবং এর ফলে তোমাদের ব্যক্তিগত কী কী সুবিধা হয় তা বর্ণনা কর | 

আমাদের প্রত্যেকের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন কাজ থাকে। সাধারণত আমরা নিজেরাই এ কাজগুলো করে থাকি । তবে অনেকেই আছে যারা নিজের কাজ নিজে করে না বা করতে চায় না । অথচ তোমরা একটু ভেবে দেখলে বুঝবে কাজ করার মধ্যে অনেক আনন্দ । বিখ্যাত ব্যক্তিরাও তাদের নিজেদের কাজ নিজেরাই করতেন। অন্যেরা করে দিতে চাইলেও তারা তা করতে দিতেন না।

নিজের কাজ নিজে করলে গুছিয়ে কাজ করা যায়, সময় বাঁচে, অর্থের সাশ্রয় হয় ও কাজ সুন্দর হয় । নিজের কাজ অন্যে করলে তার গুরুত্ব কমে যায়। তাছাড়া কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। আমরা যদি প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজ নিজেই করি তাহলে অনেক সুবিধা পাওয়া যায় । যেমন :

কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়ে

প্রাত্যহিক জীবনে নিজের কাজটি নিজে করলে কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও আগ্রহ বেড়ে যাবে । নিজের কাজ নিজে করতে করতে কাজগুলোর প্রতি তোমার এক ধরনের ভালোলাগা তৈরি হবে। এর মাধ্যমে কাজ বা অন্যদের কাজের প্রতি তোমার শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে । তখন আর কোনো কাজকে হীন বলে মনে হবে না 

আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়

নিজের কাজ নিজে করলে কাজ করতে করতে একসময় কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে । ফলে নিজের প্রতি তোমার আত্মবিশ্বাস জন্মাবে এবং যেকোনো কাজে আত্মনির্ভরশীল হতে পারবে। অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তুমি এই সুযোগ পাবে না এবং ভবিষ্যতে বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে ।

কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ বৃদ্ধি পায়

নিজের কাজ নিজে করলে কাজের প্রতি ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি হবে এবং নিজেকে পরিবার বা সমাজের গুরুত্বপূর্ণ একজন বলে মনে হবে । তুমি যখন নিজেই নিজের কাজ করবে তখন নিজের পাশাপাশি পরিবার ও সমাজের প্রতি কর্তব্য পালন ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনে তোমার আগ্রহ তৈরি হবে ।

সমস্যা সমাধান করা যায়

মাঝে মাঝে দেখা যায় হঠাৎ কোনো সমস্যার কারণে পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকতে পারেন না । তখন নিজের কাজসহ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করার প্রয়োজন হয় । সবসময় নিজের কাজ নিজে করার অভিজ্ঞতা থাকলে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো সম্পাদন করতে কোনো অসুবিধা হয় না এবং যেকোনো সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হয় ।

নেতৃত্বের গুণ বৃদ্ধি পায়

নিজের কাজ নিজে করতে করতে একসময় নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা তৈরি হবে । যখন তুমি নিজের কাজ নিজে করবে তখন কাজ করার বিভিন্ন কৌশল তোমার জানা থাকবে এবং এর মাধ্যমে তুমি প্রয়োজনীয় মুহূর্তে অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে পারবে । তাছাড়া বিভিন্ন কাজ করার ক্ষেত্রে ছোট ভাই-বোনসহ অন্যদেরকেও তোমার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পরামর্শ দিতে পারবে ।

শরীর ও মন ভালো থাকে

কাজ করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে । কারণ কাজ করার মাধ্যমে শরীরের মাংসপেশিগুলোর সঞ্চালন হয় ও শরীরের ব্যায়াম হয় । প্রতিদিন কাজ করার কারণে শরীর ভালো থাকলে খোশমেজাজে কাজ করা সম্ভব হয়, তখন মনও প্রফুল্ল থাকে । নিজের কাজ নিজে করলে শরীর ও মন দুটোই ভালো রাখা সম্ভব হয় ।

সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটে

কাজ করতে করতে মানুষ সময় বাঁচিয়ে কম পরিশ্রমে কাজ করার অনেক উপায় খুঁজে বের করে । সবসময় চেষ্টা করে নতুন কিছু উদ্ভাবন করার । যেমন: অধিকতর সহজ ও বৈজ্ঞানিক উপায়ে কাজ করা, সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করার নিত্য-নতুন পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবন করা এবং অতিরিক্ত, বাতিলকৃত ও ফেলনা জিনিস দিয়ে ব্যবহার্য জিনিসপত্র তৈরি করা ইত্যাদি । নিজের কাজ নিজে করলে নতুন কিছু করার স্পৃহা তৈরি হবে এবং এর মাধ্যমে তোমার সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশ ঘটবে ।

সহনশীলতা বৃদ্ধি পায়

যেকোনো কাজ করার ক্ষেত্রে সহনশীলতা ও ধৈর্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । সময়মতো কাজ শেষ করতে না পারলে, কাজের ফলাফল নিজের অনুকূলে না এলে অথবা কাজে ভুল হলে অনেক সময় মেজাজ বিগড়ে যায় । অনেকে সহ্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । অথচ কাজে সফল হওয়ার জন্য সহনশীল হওয়া অনেক জরুরি । নিয়মিত কাজ করলে কাজের অভ্যাস, ভুল, বারবার চেষ্টা করা এবং কাজের প্রাপ্তির মাধ্যমে মানুষ সহনশীলতার শিক্ষা পায় । সুতরাং দেখা যাচ্ছে নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে সহনশীলতার শক্তি অর্জন করা সম্ভব ।

অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়

কাজ করার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার মূল্য অনেক । সমাজে যে যত বেশি অভিজ্ঞ এবং দক্ষ সে তত নিপুণভাবে কাজ সম্পাদন করতে পারে । শুধুমাত্র কাজ করার মাধ্যমেই অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন সম্ভব এবং যে যত বেশি কাজ করে সে তত বেশি অভিজ্ঞ ও দক্ষ হয়ে উঠে । নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে তোমার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং যেকোনো কাজ দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে সক্ষম হবে ।

মননশীলতা ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে

জন্মের পর থেকেই প্রত্যেক মানুষ এক-একটি আলাদা সত্তা হিসেবে গড়ে উঠে। প্রত্যেক ব্যক্তিরই নিজস্ব ব্যক্তিত্ব ও মনোবৃত্তি আছে । বয়স বাড়ার সাথে সাথে মানুষের ব্যক্তিসত্তা ও মনন পরিবর্তিত এবং পরিশীলিত হতে থাকে । মানুষের কাজের মধ্যে তার ব্যক্তিত্ব, মননশীলতা ও রুচিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় । নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে মননশীলতা ও ব্যক্তিসত্তার বিকাশ অধিকতর সহজ হয় ।

কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পায় ও কর্মঠ হওয়া যায়

কাজ করতে করতে কাজের প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ জন্মায় । কাজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা তৈরি হওয়ায় যেকোনো কাজ তারা দ্রুততার সাথে সম্পাদন করে ফেলে । কাজের প্রতি আগ্রহ থাকলে সবসময় কর্মচঞ্চল ও যেকোনো কাজে সদা তৎপর থাকা সম্ভব হয় । নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে কর্মঠ ও কর্মতৎপর হওয়া যায় ।

অলসতা দূর হয়

কাজ করার মাধ্যমে মানুষের অলসতা দূর হয় । অলসতা একধরনের রোগ, যা মানুষকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে, মনোবলকে নিঃশেষ করে দেয় । কাজ না করার কারণে মানুষের উপর আলস্য ভর করে এবং একান্ত প্রয়োজনীয় মুহূর্তেও তারা কোনো কাজ করতে সক্ষম হয় না বা করতে পারে না । নিজের কাজ নিজে করলে অলসতা দূর হয় এবং কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পায় ৷

ভয়, লজ্জা ও হীনমন্যতা দূর হয়

কাজ করার মাধ্যমে কাজের প্রতি মানুষের ভয়, লজ্জা ও হীনমন্যতা দূর হয় । এমন অনেক মানুষ আছে যারা কাজ করতে ভয় পায় এবং লজ্জা পায় । আবার অনেকে আছে যারা কাজ করতে গিয়ে হীনমন্যতায় ভোগে, তাদের মধ্যে সারাক্ষণ ‘পাছে লোকে কিছু বলে' এই মনোভাব কাজ করে। নিজের কাজ নিজে করলে আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় । কাজের প্রতি যদি কারো কোনোরূপ ভীতি থেকে থাকে কাজ করার মাধ্যমে সেই ভীতি দূর হয়ে যায় । এছাড়াও নিজের কাজ নিজে করাতে অসম্মানের কিছু নেই বরং তা গৌরবের । সেজন্য নিজের কাজ নিজে করার মাধ্যমে লজ্জা এবং হীনমন্যতাও দূর হয় ।

এসো আমরা নিচের ঘটনাটি মনোযোগসহ পড়ি

মুশফিকের বয়স ১৪ বছর । মুশফিক একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে । তারা দুই ভাই-বোন । বড় বোন উপজেলার কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে। মুশফিকের বাবা একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার আর মা গৃহিনি । মুশফিক বিদ্যালয়ের একজন ভালো ছাত্র । শিক্ষকেরা সবাই তাকে অনেক আদর করেন । কিন্তু নিজের পড়ালেখা ছাড়া আর কোনো কাজে তার কোনো খেয়াল নেই । মশারি টাঙানো, বিছানা গোছানো, পড়ার টেবিল গোছানো, স্কুলব্যাগ গোছানো, জামা-কাপড় ধোয়া সব কাজই অন্যরা করে দেয় ।

মুশফিকের মামা একজন শিক্ষক । তার মামা তাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছেন । মামা এসে দেখেন মুশফিকের মন খুব খারাপ । সে একদম চুপচাপ, কোনো কথাই বলছে না । অন্য সময় হলে মুশফিক খুশিতে সারা বাড়ি দাপিয়ে বেড়াত । মামা মনে করলেন, হয়ত কারো সাথে অভিমান করেছে । তিনি মুশফিকের কাছে বসে আদর করে তার মন খারাপ হওয়ার কারণ জানতে চাইলেন । মুশফিক বলল, মামা আজ স্কুলে স্যারের বকুনি খেয়েছি আবার সবার সামনে অনেক লজ্জাও পেয়েছি, তাই মন খারাপ । মামা তাকে ঘটনা খুলে বলতে বললেন ।

মুশফিক বলতে লাগল, সকালে স্কুলে গিয়ে দেখি সবাই আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে । আমার এক বন্ধু বলল আমার প্যান্টের পেছনে নাকি অনেক ময়লা, তাই দেখে সবাই হাসাহাসি করছে । লজ্জায় আমার তখন কান্না পাচ্ছিল । আজ আমাদের বাংলা বিষয়ের পরীক্ষা ছিল । পরীক্ষার হলে গিয়ে দেখি আমার ব্যাগে কোনো কলম নেই । সারা ব্যাগ তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোনো কলম পেলাম না । কলম না থাকায় স্যার আমাকে অনেক বকুনি দিলেন ।

এরপর বাড়িতে চলে এলাম । বিজ্ঞান বিষয়ের স্যার বাড়ির কাজ দিয়েছেন । বিকেলে বিজ্ঞান বই খুঁজতে গিয়ে দেখি সেটি জানালার পাশে এমনভাবে রাখা যে বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে । তাই আর পড়তে পারলাম না । এসব কারণে আমার মন খুব খারাপ । আমি এখন কী করব মামা? মামা তার সব কথা শুনে বললেন তুমি প্যান্ট ধোয়ার সময় ভালোভাবে খেয়াল করোনি কেন? তাছাড়া স্কুলব্যাগ গোছানোর সময় পড়ার টেবিল গুছিয়ে ব্যাগে কলম নিলে না কেন? মুশফিক বলল, প্যান্ট তো ধুয়েছে রহিম (কাজের লোক) আর পড়ার টেবিল এবং স্কুলব্যাগও সেই গুছিয়েছে ।

মামা বুঝতে পারলেন আসল সমস্যাটি কোথায় । তিনি তার ভাগ্নেকে বললেন, শোন নিজের কাজ নিজে করলে এসব সমস্যা হতো না । কারণ তুমি নিজে করলে কাজটি আরও ভালোভাবে করতে পারতে । এখন থেকে তোমার কাজগুলো তুমিই করবে । তাহলে আর লজ্জাও পেতে হবে না, স্যারের বকুনিও শুনতে হবে না । এখন আর মন খারাপ করে কোনো লাভ নেই । চলো একটি বিজ্ঞান বই সংগ্রহ করি । যাওয়ার আগে তোমার প্যান্টটি সাবান দিয়ে ভিজিয়ে রাখো । বাড়িতে ফিরে প্যান্ট ভালো করে ধুয়ে ফেলবে ।

মুশফিক তার নিজের সমস্যাগুলো উপলব্ধি করতে পারল । এরপর থেকে সে সবসময় তার নিজের কাজগুলো নিজেই করে এবং সে কারণে তাকে আর কখনো লজ্জাও পেতে হয়নি এবং বকুনিও শুনতে হয় না ।

একক কাজ-১: নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর লেখ -
১. কী কী কারণে মুশফিকের মন খারাপ ছিল?
২. নিজের কাজ নিজে না করলে এ রকম আরও কী কী অসুবিধা হতে পারে তা লিখ । ৩. মামার উপদেশ শুনে কীভাবে তার সমস্যা সমাধান করেছিল ।
দলগত কাজ-২: শিক্ষকের নির্দেশনায় ছোট দলে সাপ্তাহিক ভিত্তিতে শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করো ।

নিজের কাজ নিজে করার সুবিধা ও না করার অসুবিধা

নিজের কাজ নিজে করার অনেক সুবিধা রয়েছে । নিজের কাজ নিজে করলে কাজটি নিজের মতো করে করা সম্ভব হয় । কারণ তোমার কাজ তুমি কীভাবে করবে সেটি তোমার চেয়ে আর কেউ ভালো বুঝবে না । তাছাড়া নিজের কাজ নিজে করলে কাজ করার দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং অন্যের উপর নির্ভর করে থাকতে হয় না । অন্যদিকে নিজের কাজ নিজে না করলে অনেক ধরনের অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয় এবং বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয় । যেমন, আত্মবিশ্বাস কমে যাওয়া, অন্যের কাজ পছন্দ না হওয়া, অন্যের উপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাওয়া ও আর্থিক ক্ষতিসহ নানান রকমের সমস্যার মুখোমুখি হওয়া ।

তোমরা নিচের টেবিলে নিজের কাজ নিজে করার সুবিধা ও নিজের কাজ নিজে না করার অসুবিধাগুলো লেখ । তোমাদের বোঝার সুবিধার জন্য দুইটি করে সুবিধা ও অসুবিধা লেখা আছে ।

ক্রম নিজের কাজ নিজে করার সুবিধানিজের কাজ নিজে না করার অসুবিধা
সঠিক উপায়ে কাজ করা হয়কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
কাজের চাপ তৈরি হয় নাদক্ষতা বৃদ্ধি পায় না
  
  
  
  
  
  
  
১০  

পাঠ : ৫, ৬ ও ৭

প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলোর গুরুত্ব

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে নানান ধরনের কাজ থাকে । এর মধ্যে কিছু কাজ একান্ত নিজের আবার কিছু কাজ আছে যা পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে সম্পর্কিত। পরিবারের অন্য সদস্যদের এ রকম কাজগুলোও আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় । যেমন : পরিবারের কেউ যদি বাজার না করেন আর কেউ যদি রান্না না করেন তাহলে পরিবারের সবাইকে না খেয়ে থাকতে হবে । পরিবারের সদস্যরা যদি তাদের কাজগুলো না করেন তাহলে আমাদের জীবন থমকে যাবে । পরিবারের বিভিন্ন ধরনের কাজ সম্পাদন করার জন্য পরিবারের একজনকে অন্যজনের উপর নির্ভর করতে হয় ও সহযোগিতা নিতে হয় ।

তোমরা সবাই তোমাদের প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের সদস্যরা কী কী কাজ করে থাকে তা নিয়ে চিন্তা কর ৷ এরপর সবাই নিচের টেবিলে প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজগুলো লেখ । তোমাদের বোঝার সুবিধার জন্য তিনটি কাজ লেখা আছে ।

ক্রম                                       প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজ সমূহ
রান্না করা
বাজার করা
গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন
 
 
 
 
 
 
১০ 

উপরে তোমরা যে কাজগুলোর কথা উল্লেখ করলে এ রকম অনেক কাজ আছে যা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় এবং পরিবারের সদস্যরা নিয়মিত এ কাজগুলো করে থাকেন । তোমরা কি কখনো ভেবে দেখেছ তারা এ কাজগুলো নিয়মিতই করছেন; যদি এ কাজগুলো তারা না করতেন তাহলে পরিবারের অবস্থা কী দাঁড়াত ? যেমন, যে পরিবারে গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি রয়েছে সে পরিবারের কেউ যদি গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালনের কাজটি নিয়মিত না করত, দেখাশোনা না করত তাহলে আমরা এগুলো কোথায় পেতাম? ছোট ভাই-বোনদের যদি মা-বাবা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দেখাশুনা না করতেন কীভাবে তারা বেড়ে উঠত? প্রতিদিন যদি কেউ ঘর-দোর-আঙিনা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন না করত তাহলে কী অবস্থা হতো? পরিবারের বড়রা যদি তোমাদের পড়া দেখিয়ে না দিতেন তাহলে তোমরা কীভাবে পড়া শেষ করতে? পরিবারের সদস্যরা এসব কাজ নিয়মিত করেন বলেই আমরা সুন্দর জীবন-যাপন করতে পারি।

দলগত কাজ :
প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় যে সকল কাজের ক্ষেত্রে আমরা পরিবারের অন্যদের উপর নির্ভরশীল সে কাজগুলো তারা না করলে কী ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো? তোমরা সবাই দলে বিভক্ত হয়ে আলোচনা করে উপস্থাপন করো ।

তোমরা সবাই জানো তোমাদের কাজ ছাড়াও প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক । এবার এসো আমরা প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব সম্পর্কে জানি—

খাদ্যের সংস্থান

পরিবারের সদস্যরা তাদের কাজের মাধ্যমে পরিবারের সব সদস্যের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করেন । বাবা-মা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্যরা বাজার করে, রান্না করে আমাদের প্রতিদিনের সকাল-দুপুর-রাতের খাবারের সংস্থান করেন । তারা এ কাজগুলো না করলে পরিবারের সদস্যদের প্রাত্যহিক জীবনের ভরণ-পোষণ হতো কোথা থেকে? এজন্য আমাদের জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক ।

সুন্দর জীবনযাপন

দৈনন্দিন জীবনকে সুন্দর করার জন্য পরিবারের সদস্যরা প্রতিনিয়ত কাজ করে থাকেন । বাড়ির আঙিনা, ঘর পরিচ্ছন্ন রাখা, প্রতিদিন ঘর গোছানো, আসবাবপত্র ও কাপড়-চোপড় পরিষ্কার রাখার জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে পরিবারের সদস্যরা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনকে সুন্দর ও আনন্দময় করে তোলেন । তারা তাদের কাজের মাধ্যমে আমাদেরকে সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করেন ।

শিক্ষা

যারা লেখাপড়ায় জড়িত তাদেরকে পরিবারের সদস্যরা প্রতিদিন পড়া দেখিয়ে দেন ও বিদ্যালয়ের কাজ তৈরি করতে সহায়তা করেন । শিক্ষার্থীদের পড়ালেখাকে নির্বিঘ্ন ও নিশ্চিত করার জন্য পরিবারের বাবা-মা, ভাই-বোন বা পরিবারের অন্যরা নিয়মিত খোঁজখবর রাখেন । লেখাপড়ার বিভিন্ন উপকরণ তথা খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি তারা সরবরাহ করেন । এজন্য আমাদের জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক ।

চিকিৎসা

পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে তাকে ডাক্তার দেখানো, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা, ওষুধপত্র কেনা, ওষুধ খাওয়ানো ইত্যাদি কাজ পরিবারের অন্য সদস্যরাই করে থাকেন। যদি পরিবারের কেউ হঠাৎ কোনো রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন তাহলে তার সেবা-শুশ্রুষা করতে সাথে সাথে ডাক্তার বা নার্স পাওয়া সম্ভব হয় না। তখন পরিবারের সদস্যরাই তাকে প্রাথমিক সেবা-শুশ্রূষা দিয়ে থাকেন এবং পরে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। এক্ষেত্রেও পরিবারের অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক।

গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন

গৃহপালিত বিভিন্ন প্রাণী তথা গরু, ছাগল, মহিষ ও হাঁস-মুরগি থেকে আমরা আমিষ জাতীয় খাবার পেয়ে থাকি । এর মধ্যে দুধ, ডিম, মাংশ ইত্যাদি । আবার এসব প্রাণীর বিষ্ঠা দিয়ে আমরা জৈব সার তৈরি করে থাকি । তাছাড়া বর্তমানে এসব প্রাণীর বিষ্ঠা থেকে জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস পাওয়া যায় । উপরোক্ত জিনিসগুলো এসব প্রাণী থেকে পেতে হলে তাদের যথাযথ যত্নের প্রয়োজন হয়, যা পরিবারের সদস্যরা করে থাকেন ।

এছাড়াও প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে কাজ করার মাধ্যমে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি, যা আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোনো কাজ করার জন্য সঠিক দিকনির্দেশনা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যদের কাছ থেকে যেকোনো কাজ সহজভাবে করার দিকনির্দেশনা পাওয়া যায় ৷ প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন কাজ লক্ষ্য করার মাধ্যমে কাজ করার বিভিন্ন উপায় ও কৌশল শেখা যায়। অনেক সময় তারা উপদেশ ও পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি নিজেরা কাজ করেন ও হাতেকলমে কাজ করার শিক্ষা দেন। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কাজের মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস, আগ্রহ ও উদ্দীপনা লাভ করা যায় ।

সবাই নিচের ঘটনাটি মনোযোগসহ পড়

করিম ও রহিমা দুই ভাই-বোন । করিমের বয়স ১৪ বছর আর রহিমার বয়স ১২ বছর । তারা দু'জনেই লেখাপড়া করে । করিম অষ্টম শ্রেণি আর রহিমা ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। তাদের পরিবার একটি দরিদ্র পরিবার । তাদের বাবা নেই ।

মা সালেহা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার ও তাদের লেখাপড়ার খরচ চালান । প্রতিদিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রম শেষে বাজার করে তারপর চুলায় রান্না চড়ান । দিনশেষে তার সন্তানদের মুখের দিকে চেয়ে তিনি সব কষ্ট ভুলে যান । তার সন্তানরা তাকে ঘর গোছানো, গবাদি পশু-পাখি লালন-পালনসহ পারিবারিক বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করে ।

একদিন করিম ও রহিমা বিদ্যালয় থেকে ফিরে দেখে তাদের মা ভীষণ অসুস্থ । বাড়িতে সব অগোছালো পড়ে আছে । যেহেতু মা অসুস্থ তাই আজ বাজারও করা হয়নি এবং রান্নাও হয়নি । মায়ের অসুস্থতায় তারা দুজন বেশ অসহায় বোধ করল; তারা কী করবে বুঝে উঠতে পারল না । তারা তাদের মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে চাইলো । প্রতিবেশীরাও ডাক্তারের কাছে নেওয়ার পরামর্শ দিল । তাই তারা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের মাকে ডাক্তারের নিকট নিয়ে গেল । অল্প কয়েকদিনের মধ্যে তাদের মা সুস্থ হয়ে উঠল । বছরে করতে হয় সেগুলো প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন কাজ । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, খাবার তৈরি প্রতিদিনের কাজ আর ঘর মেরামত করা বাৎসরিক কাজ । দুই ধরনের কাজই মানুষ নিজেরাও করে আবার অন্যদেরও সহায়তা নেয় । আমাদের আলোচনা পরিবারের বাইরে অন্যরা করে এমন কাজ নিয়ে । প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এবং যা পরিবারের বাইরে অন্যরা করে এমন কিছু কাজের তালিকা নিচের টেবিলে লেখ । তোমাদের বোঝার সুবিধার জন্য তিনটি ভাগে একটি করে কাজ উল্লেখ করে দেওয়া হলো ।

একক কাজ-১ : নিচের প্রশ্ন দুটির উত্তর লেখ-
১. মা অসুস্থ হওয়ার ফলে প্রাত্যহিক কাজে করিম ও রহিমাদের পরিবারে কী কী সমস্যা হচ্ছে? ২. প্রাত্যহিক জীবনে পরিবারের অন্য সদস্যদের কাজ কেন গুরুত্বপূর্ণ তা উপরোক্ত ঘটনার আলোকে ব্যাখ্যা করো ।
দলগত কাজ-২ : শিক্ষকের নির্দেশনায় শ্রেণির সকলে মিলে প্রতিমাসে একবার বিদ্যালয়ের খেলার
মাঠ/বাগান পরিষ্কার করো ।

পাঠ : ৮,৯ ও ১০

প্রাত্যহিক জীবনে সম্পৃক্ত নয় এমন কাজ

উপরে বিভিন্ন কাজের যে ছবিগুলো তোমরা দেখতে পাচ্ছ সেগুলো প্রতিদিন করতে হয় না কিন্তু আমাদের জীবনের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এ রকম অনেক কাজ আছে যেগুলো নিয়ে এই অধ্যায়ে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ।


জীবনকে সুন্দরভাবে পরিচালনার জন্য মানুষ যে কাজগুলো করে থাকে সেগুলো দুই ধরনের। একটি হচ্ছে প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত আর অন্যটি প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন । যে কাজগুলো প্রতিদিনই করা আবশ্যক এবং না করলে সমস্যা হবে সেগুলো প্রাত্যহিক জীবনের কাজ আর যে কাজগুলো প্রতিদিন করার দরকার হয় না বা প্রতিদিন না করলে কোনো সমস্যা হয় না বরং সপ্তাহে, মাসে, ছয় মাসে বা

ক্রম                                                                        প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন কাজ
সাপ্তাহিকমাসিকবাৎসরিক
  ফসলের জমিতে পানি সেচ
                      দেওয়া
চুল কাটাঘর মেরামত
   
   
   
   
   
   
   

তোমরা হয়তো খেয়াল করে থাকবে যে মাঝে মাঝে তোমাদের বাড়িতে বাইরের লোকেরা এসে বিভিন্ন কাজ করে আবার চলে যায়, সে কাজগুলো প্রতিদিন করার প্রয়োজন হয় না । যেমন: বলা যেতে পারে, কৃষিজমিতে চাষাবাদের জন্য মৌসুম অনুযায়ী এক অঞ্চলের লোক অন্য অঞ্চলের মানুষের বাড়িতে থেকে কাজ করে, পয়ঃনিষ্কাশন কর্মী কয়েক মাস পরপর বাড়িতে এসে মল-মূত্রের ট্যাংক পরিস্কার করে, কাঠমিস্ত্রি বা রাজমিস্ত্রিরা বছরে একবার বাড়ি মেরামত করতে আসে, রং মিস্ত্রি বাড়ি রং করে দেয়, গাছিরা কয়েকমাস পরপর গাছ পরিষ্কার করে দেয় ৷

এছাড়াও আমাদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ আরও এমন অনেক কাজ আছে যা অন্যরা সম্পাদন করে । উদহারণস্বরূপ বলা যায়, জেলেদের মাছ ধরা, দোকানির দোকানদারি, কাঁচাবাজারের বিক্রেতা, গবাদিপশু পালক, বিভিন্ন যানবাহনের চালক, রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য ডাক্তার ইত্যাদি। প্রায়ই আমাদের চাল-ডাল, মাছ-মাংস-তরিতরকারি কেনা লাগে । দোকান থেকে জিনিসপত্র কেনা, বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া-আসা করতে হয় । এ কাজগুলো সরাসরি আমরা করি না অথচ এগুলো আমাদের পারিবারিক জীবনের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত অর্থাৎ আমাদের কাজ যা অন্যরা করে ।

দলগত কাজ :
‘প্রাত্যহিক জীবনে প্রয়োজনীয় সকল কাজ নিজেই করা সম্ভব' বিষয়ে বিতর্কে অংশগ্রহণ করতে হবে ।

প্রাত্যহিক জীবনে সম্পৃক্ত নয় এমন কাজগুলো যারা করেন

সুন্দরভাবে জীবন ধারণের জন্য সংসার জীবনে আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে হয় । এ কাজগুলোর সবগুলোই যে আমরা নিজেরা করি বা করতে সক্ষম তা নয় । কিছু কিছু কাজ আছে যেগুলো অন্যের সহায়তা ছাড়া করা সম্ভব নয় । এসব কাজ করার জন্য পরিবারের বাইরে অন্যদের সহযোগিতা নিতে হয় । এসব কাজ সংশ্লিষ্ট পেশার লোকজন আমাদের জন্য করে থাকেন ।

তোমরা একটু ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখবে এ কাজগুলো যারা করেন তারা তোমাদের আশপাশেরই লোক, প্রতিবেশী, একই গ্রামের কিংবা একই এলাকার বাসিন্দা । অনেকেই থাকেন যারা তোমাদের পূর্বপরিচিত এবং বেশ চেনাজানা । এদের মধ্যে যারা যে কাজে পারদর্শী তারাই সে কাজগুলো করে থাকেন ।

কাজগুলোর গুরুত্ব

পারিবারিক জীবনকে গতিশীল করার ক্ষেত্রে পরিবারের বাইরে অন্যদের কাজের গুরুত্ব অনেক । এসো আমাদের জীবনে অন্যদের কাজের গুরুত্ব নিচে আলোচনা করি- পণ্যের যোগান: আমাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য অনেক জিনিসপত্রের দরকার হয় । প্রতিদিনের আহারের আয়োজনে চাল-ডাল, তরি তরকারি, মাছ-মাংস, দুধ ও অন্যান্য মুদি সামগ্রী, কিংবা শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার জন্য বই-খাতা-কলমসহ বিভিন্ন জিনিসের প্রয়োজন হয় । জেলে, কৃষক, গোয়ালা, ব্যবসায়ী ও দোকানদার তাদের মেধা ও শ্রমের মাধ্যমে এসব জিনিসের যোগান দেন ।

অবকাঠামোগত উন্নয়ন

দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন বিচার করতে গেলে যে বিষয়টি উঠে আসে তা হচ্ছে অবকাঠামোগত উন্নয়ন । দেশের প্রকৌশলী ও নির্মাণ শ্রমিকরা তাদের কাজের মাধ্যমে অবকাঠামোগত উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছেন । বাড়ি-ঘর, অফিস-আদালত নির্মাণ, রাস্তা-ঘাট তৈরি ও মেরামত, পুকুর-খাল-নালা খনন, বন্দর নির্মাণ ও বাজারসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরির মাধ্যমে তারা দেশের সার্বিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন । এজন্য আমাদের জীবনে প্রকৌশলী, নির্মাণ শ্রমিক ও অন্যান্য শ্রমিকের কাজের গুরুত্ব অনেক ।

যাতায়াত

জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয় । চাকরিজীবীদের অফিসে যাওয়া, কোথাও বেড়াতে যাওয়া, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কাজ করার জন্য মানুষকে রাস্তায় চলাচল করতে হয় । পরিবহনকর্মী ও চালকরা তাদের কাজের মাধ্যমে মানুষকে সঠিক সময়ে তার গন্তব্যে নিরাপদে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে থাকেন ।

বিনোদন

সুষ্ঠু বিনোদন মানুষের জীবনধারণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। লেখক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, বেতার ও টেলিভিশন কর্মীরা মানুষের বিনোদনের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে থাকেন। বিভিন্ন খেলোয়াড়রা তাদের খেলার মাধ্যমে মানুষকে আনন্দ দেন । বিভিন্ন পার্ক, থিয়েটার, সিনেমা হল, যাদুঘরে কর্মরত কর্মীরা সেবা প্রদানের মাধ্যমে আমাদের বিনোদনের ব্যবস্থা করে ।

খাদ্য উৎপাদন

খাদ্য মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোর মধ্যে একটি। দেশের কৃষকসমাজ তাদের নিরন্তর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন শস্য ও ফসল ফলিয়ে দেশের খাদ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছে । কৃষক কৃষি কাজ করে, জেলে মাছ শিকার করে ও রাখাল গবাদি পশুকে লালন-পালন করে দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।

সুস্থ-সবল জীবনযাপন

অসুস্থ হলে বা রোগাক্রান্ত হলে মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যায়। সেই হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবক-সেবিকারা মানুষকে সেবা শুশ্রূষা দিয়ে সুস্থ করে তোলেন । তারা তাদের কাজের মাধ্যমে মানুষকে সুস্থ সবলভাবে বাঁচতে, সুষ্ঠুভাবে জীবন যাপন করতে সহায়তা করেন। এজন্য আমাদের জীবনে চিকিৎসক, সেবক-সেবিকার কাজের গুরুত্ব অনেক ।

নিরাপত্তা

চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মানুষকে স্বস্তিতে থাকতে দেয় না; মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে । মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য দেশের সকল পর্যায়ে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন ধরনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে। তাছাড়া দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে সশস্ত্র বাহিনী ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী কাজ করছে। তারা তাদের কাজের মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড দমন করে ও মানুষকে নিরাপত্তা দেয় ।

সুন্দর জীবনযাপন

মানুষের জীবনকে সুন্দর করার জন্য বিভিন্নভাবে বিভিন্নজন প্রতিনিয়ত কাজ করে থাকেন। পরিচ্ছন্নকর্মীরা প্রতিদিন এলাকা পরিষ্কার করে রাখে, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন কর্মীরা মানুষকে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবা প্রদানের জন্য দিন-রাত পরিশ্রম করে । পোশাক শ্রমিকরা বিভিন্ন ধরনের সুন্দর সুন্দর পোশাক তৈরি করে এবং অন্যান্য শ্রমিকরা বিভিন্ন আসবাব ও তৈজসপত্র তৈরি করে যা আমাদের সৌন্দর্যবোধকে জাগ্রত করে । তারা তাদের কাজের মাধ্যমে মানুষকে সুষ্ঠু ও সুন্দর জীবনযাপনে সহায়তা করে ।

দলগত কাজ
প্রতিদিন করতে হয় না এমন কিছু কাজ চিহ্নিত করে এগুলোর গুরুত্ব পোস্টার পেপারে উপস্থাপন করো ।

 

Content added By
Please, contribute to add content into বহুনির্বাচনি প্রশ্ন.
Content
Please, contribute to add content into সৃজনশীল প্রশ্ন.
Content
Promotion
Content for the offcanvas goes here. You can place just about any Bootstrap component or custom elements here.